শিক্ষা ও সংস্কৃতির বন্ধন দৃঢ় করতে প্রফেসর ইউনুসের বিশেষ উপহার
চিফ অ্যাডভাইজার প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসের অনন্য উপহার: মালয়েশিয়ার নেগেরি সেম্বিলানের রাজার হাতে ‘আর্ট অব ট্রায়াম্প’

কুয়ালালামপুর, বুধবার —
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস মালয়েশিয়ার নেগেরি সেম্বিলানের রাজা ও মালয়েশিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (Universiti Kebangsaan Malaysia-UKM)-এর চ্যান্সেলর তুয়ানকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুয়ানকু মুন্নাওয়ির-এর হাতে একটি বিশেষ উপহার তুলে দিলেন। উপহারটি ছিল ‘Art of Triumph’ নামের এক অনন্য গ্রাফিতি বই, যা বিশ্বব্যাপী সৃজনশীলতা, দৃঢ়তা ও বিজয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।
বুধবার কুয়ালালামপুরে এক বিশেষ বৈঠকের সময় উপহারটি প্রদান করেন প্রফেসর ইউনুস। এই বৈঠকে দুই দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়, বিশেষত উচ্চশিক্ষা, প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে।
সাক্ষাতের প্রেক্ষাপট
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী, দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সামাজিক ব্যবসা ও মানব উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছেন। তার এই সফর ছিল মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা অঙ্গনের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। Universiti Kebangsaan Malaysia মালয়েশিয়ার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং নেগেরি সেম্বিলানের রাজা তুয়ানকু মুহরিজ এর চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বৈঠকে উভয় দেশের শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং নীতি-নির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (SDGs), জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, এবং যুবসমাজের জন্য উদ্ভাবনী শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
‘Art of Triumph’ বইয়ের তাৎপর্য
‘Art of Triumph’ একটি বিশেষ শিল্পগ্রন্থ, যেখানে গ্রাফিতি শিল্পের মাধ্যমে বিজয়, সংগ্রাম ও প্রেরণার গল্প ফুটে উঠেছে। বইটি বিভিন্ন শিল্পীর সৃষ্টিকর্মের সংকলন, যা তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীলতা ও মানবিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত করে। প্রফেসর ইউনুস এই বই উপহার দিয়ে বন্ধুত্ব, সংস্কৃতি ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবে বার্তা পৌঁছে দেন।
রাজা তুয়ানকু মুহরিজের প্রতিক্রিয়া
উপহার গ্রহণের সময় তুয়ানকু মুহরিজ প্রফেসর ইউনুসের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এই বই শুধুমাত্র শিল্প নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণার উৎস। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শিক্ষা ও সংস্কৃতি একসাথে মানবতার উন্নয়নে কাজ করতে পারে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের মাধ্যমে আরও গভীর হতে পারে।
শিক্ষা ও উন্নয়নে সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি
বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষার্থী বিনিময় কর্মসূচি, যৌথ গবেষণা এবং উদ্ভাবনী প্রকল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়। প্রফেসর ইউনুস বলেন, “শিক্ষা হলো টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। আমরা যদি তরুণ প্রজন্মকে সঠিক সুযোগ দিতে পারি, তবে তারা বিশ্ব পরিবর্তনের নেতৃত্ব নিতে পারবে।”
সফরের অন্যান্য দিক
প্রফেসর ইউনুস সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ার একাধিক শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে যাবেন। সেখানে তিনি সামাজিক ব্যবসা, ক্ষুদ্রঋণ এবং তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির কৌশল নিয়ে সেমিনার ও আলোচনা করবেন।
এই সফরকে উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরণের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত বিনিময় দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করবে।
আপনার মতামত লিখুন
Array