খুঁজুন
শনিবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৫, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩২

মরুভূমিতে যুদ্ধজাহাজ: চীনের টাকলামাকান রহস্য ও ভারত-আমেরিকার অস্থিরতা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫, ২:৪০ পূর্বাহ্ণ
মরুভূমিতে যুদ্ধজাহাজ: চীনের টাকলামাকান রহস্য ও ভারত-আমেরিকার অস্থিরতা

ভূমিকা: অনুপস্থিত সমুদ্রের বুকে নৌযুদ্ধের প্রস্তুতি

কেন চীন সমুদ্র থেকে বহু দূরে, একান্ত মরুভূমির বুকে তৈরি করছে বিশাল যুদ্ধজাহাজ? এ প্রশ্ন আজ বিশ্বের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মাথাব্যথার কারণ। টাকলামাকান মরুভূমির বালুকণার মধ্যে যেসব স্থাপনা উঠেছে, তা কেবল অস্বাভাবিক নয়—বরং নজিরবিহীন। Business Insider এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, “টাকলামাকান মরুভূমিতে চীনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের নকল মডেল রয়েছে। এই জাহাজগুলো ব্যাপকভাবে টার্গেট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে বিশ্বাস করা হয়”।

এই প্রকল্পের পেছনে যে শুধু সামরিক প্রশিক্ষণ রয়েছে তা নয়—রয়েছে গভীর কৌশলগত বার্তা। Slash Gear এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, “একটি বিমানবাহী রণতরীর শেষ স্থান যেখানে আপনি আশা করবেন তা হল মরুভূমির ঠিক মাঝখানে। কিন্তু চীনা সামরিক বাহিনীর ক্ষেত্রে এটি আলাদা”।

ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট: টাকলামাকান—বিচ্ছিন্নতার নিখুঁত ক্ষেত্র

টাকলামাকান মরুভূমির ভৌগোলিক গুরুত্ব

টাকলামাকান মরুভূমি চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের তারিম অববাহিকার কেন্দ্রে অবস্থিত। Wikipedia অনুযায়ী, “এর আয়তন ৩৩৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার, যা জার্মানির চেয়ে সামান্য ছোট। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থানান্তরিত বালুময় মরুভূমি”।

ভারত-চীন সীমান্ত থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২০০-২৫০ কিলোমিটার, যা LAC (Line of Actual Control) এ চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Britannica অনুযায়ী, “টাকলামাকান পশ্চিম ও দক্ষিণে ৩,৯০০ থেকে ৪,৯০০ ফুট (১,২০০ থেকে ১,৫০০ মিটার) এবং পূর্ব ও উত্তরে ২,৬০০ থেকে ৩,৩০০ ফুট (৮০০ থেকে ১,০০০ মিটার) উচ্চতায় পৌঁছে”।

আবহাওয়া ও কৌশলগত সুবিধা

চরম শুষ্কতা, জনবসতিহীন বিস্তৃতি এবং প্রাকৃতিক বিচ্ছিন্নতা এই অঞ্চলটিকে সামরিক কার্যকলাপের জন্য আদর্শ করে তুলেছে। Facts and Details অনুযায়ী, “শীতে তাপমাত্রা প্রায়শই হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়; গ্রীষ্মে তাপমাত্রা প্রায়শই ১২০°F অতিক্রম করে, বালির তাপমাত্রা ১৫০°F এ পৌঁছায়”।

স্যাটেলাইট চিত্র ও কাঠামোগুলোর বিস্ময়কর বিবরণ

২০২৫ সালের আবিষ্কার ও প্রকাশ

US Naval Institute (USNI) News এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, “চীনা সামরিক বাহিনী টাকলামাকান মরুভূমিতে একটি নতুন টার্গেট রেঞ্জ কমপ্লেক্সের অংশ হিসেবে আমেরিকান বিমানবাহী রণতরী ও অন্যান্য মার্কিন যুদ্ধজাহাজের আকৃতির টার্গেট তৈরি করেছে”।

কাঠামোগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা

Planet Labs দ্বারা গৃহীত স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়:

জেরাল্ড আর. ফোর্ড ক্লাস এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের প্রতিরূপ: Yahoo News অনুযায়ী, “স্যাটেলাইট ইমেজে USS Gerald R. Ford বিমানবাহী রণতরীর একটি মক-আপ দেখা যাচ্ছে একটি মরুভূমিতে, সম্ভবত টার্গেট প্র্যাকটিসের জন্য। প্ল্যানেট ল্যাবসের ইমেজে দ্বীপ দেখা যাচ্ছে, যা Nimitz-class বাহকের চেয়ে বেশি পিছনে, এবং মডেলের ডেকে চিহ্নিত চারটি ক্যাটাপাল্ট ট্র্যাক”।

আর্লি বার্ক ক্লাস ডেস্ট্রয়ারের প্রতিরূপ: The War Zone অনুযায়ী, “একটি স্পষ্ট মার্কিন Arleigh Burke-class ডেস্ট্রয়ারের অনুরূপ, যার ব্রিজ, ফানেল এবং এমনকি মিসাইল নিক্ষেপের জন্য ব্যবহৃত ভার্টিকাল লঞ্চ সিস্টেমের মতো মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর সুনির্দিষ্ট রূপরেখা রয়েছে”।

জুমওয়াল্ট ক্লাস ডেস্ট্রয়ার সদৃশ কাঠামো: Defense Magazine এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “চীন বছরের পর বছর ধরে এই মক-আপগুলো তৈরি করে আসছে, এবং স্পষ্ট টার্গেটগুলো, অতীত ও বর্তমান উভয়ই, পিপলস লিবারেশন আর্মির পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের লক্ষ্যগুলোর উপর আলোকপাত করতে পারে”।

নৌ-ঘাঁটি সদৃশ কাঠামো

South China Morning Post অনুযায়ী, “নতুন টার্গেটগুলোর মধ্যে একটি—একটি ডেস্ট্রয়ার ও পিয়ারের মক-আপ—২০২১ সালের ডিসেম্বরে তৈরি হয়েছিল, একটি বিস্তৃত মডেল বিমানবাহী রণতরীর মাত্র ১৩ কিমি (আট মাইল) দক্ষিণপূর্বে”।

 চীনের টাকলামাকান রহস্য

ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ও সম্ভাব্য বার্তা

ভারতের জন্য হুমকির সংকেত

GIS Reports Online এর বিশ্লেষণ অনুযায়ই, “ভারত ও চীন বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা বরাবর অবকাঠামো নির্মাণ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, যা পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে”। LAC থেকে মাত্র ২০০-২৫০ কিলোমিটার দূরে এই সামরিক মডেল তৈরি করা ভারতের জন্য একটি স্পষ্ট হুমকির ইঙ্গিত।

আমেরিকার জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ

National Interest এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, “চীনের ‘ক্যারিয়ার কিলার’: DF-21D ও DF-26B মিসাইল কীভাবে মার্কিন নৌবাহিনীকে হুমকি দেয়। চীনের এই মিসাইলগুলো দক্ষিণ চীন সাগরে পরীক্ষা একটি কৌশলগত প্রচেষ্টার সংকেত যা মার্কিন নৌশক্তি প্রতিহত করতে চায়”।

কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ

BGNES এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, “মরুভূমিতে স্থাপিত জাহাজটি প্রকৃত Gerald Ford এর সম্পূর্ণ রাডার সিগনেচার অনুকরণ করে। এটি চীনা সামরিক বাহিনীকে তাদের মিসাইল চরম নির্ভুলতার সাথে ক্যালিব্রেট করতে সাহায্য করে”। এই ধরনের প্রদর্শনী একটি স্পষ্ট বার্তা—চীন প্রতিদ্বন্দ্বীদের জানাতে চায় যে তারা তাদের যুদ্ধ ক্ষমতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বোঝে।

রহস্যময় উপাদান: অসমাপ্ত রেললাইনের ধাঁধা

বাঁকা রেললাইনের রহস্য

YouTube চ্যানেল “Why China Is Building Ships in the Desert” এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, “ট্রেন ট্র্যাকগুলো সরল না চলে বাঁকা ও প্যাঁচানো, তারপর একটি তীব্র ডান বাঁক নেয়। এটি অদ্ভুত কারণ আশেপাশের মরুভূমি সম্পূর্ণ সমতল ভূমি, তাই এমন কোনো প্রাকৃতিক বাধা নেই যার জন্য এই বাঁকগুলো প্রয়োজন হবে”।

অসমাপ্ত প্রকল্পের উদ্দেশ্য

The Shell YouTube চ্যানেলের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, “বাঁকা ট্রেন ট্র্যাক সমতল ভূভাগ সত্ত্বেও মরুভূমি জুড়ে একটি অস্বাভাবিক প্যাটার্নে কাটা হয়েছে যা সরল লাইনের অনুমতি দেবে। এগুলো দক্ষিণে হঠাৎ শেষ হয়ে যায় এবং উত্তরে একটি সামরিক সুবিধার সাথে সংযুক্ত হয়”।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাঁকা ট্র্যাক জাহাজের এড়ানোর কৌশল অনুকরণ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে চীন চলমান টার্গেটের বিরুদ্ধে মিসাইল পরীক্ষা করতে পারে।

সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ও বিশ্লেষণ

সিমুলেশন ট্রেনিং ও মিসাইল টার্গেটিং

Wikipedia অনুযায়ী, “DF-26 অ্যান্টি-শিপ ব্যালিস্টিক মিসাইল উন্নয়নের জন্য চীনের টাকলামাকান মরুভূমিতে অবস্থিত একটি মিসাইল পরীক্ষা রেঞ্জ ব্যবহৃত হয়। এই সুবিধাটি, যা পিপলস লিবারেশন আর্মির অ্যান্টি-অ্যাক্সেস/এরিয়া ডেনাইয়াল (A2/AD) কৌশলের একটি উপাদান, এতে রয়েছে মার্কিন নৌ সম্পদের পূর্ণ আকারের মক-আপ”।

প্রযুক্তিগত গবেষণা ও উন্নয়ন

Vice এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “স্যাটেলাইট ইমেজ দেখায় চীন তার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় মরুভূমিতে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের মক-আপের মতো দেখতে কাঠামো তৈরি করেছে, সম্ভাব্য ভবিষ্যত সংঘাতের জন্য চীনা সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত করতে”।

মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও প্রতিরোধমূলক কৌশল

Derecha Diario অনুযায়ী, “চীনা আর্মি সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে, মিসাইল আক্রমণের অনুশীলন করতে মরুভূমি অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর প্রতিকৃতি তৈরি করেছে”।

সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

ভারত-চীন সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাস

Al Jazeera এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, “ভারত ও চীন তাদের বিতর্কিত সীমান্তে একটি সামরিক অচলাবস্থা সমাধানে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে, পশ্চিমা হিমালয়ে একটি মারাত্মক সংঘর্ষের চার বছর পর যা তাদের সম্পর্ক মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করেছিল”।

তবে South Asian Voices এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, “বিস্তৃত আঞ্চলিক বিরোধ অমীমাংসিতই থেকে যায় এবং এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে অব্যাহত কূটনৈতিক সম্পৃক্ততার জন্য দরজা খুলে দেয়”।

আমেরিকার প্রতিক্রিয়া ও কৌশলগত সমন্বয়

BBC অনুযায়ী, “ভারতের একটি উচ্চ-উচ্চতার এয়ার বেসের জন্য নতুন রাস্তা নির্মাণ ২০২০ সালে চীনা সৈন্যদের সাথে একটি মারাত্মক সংঘর্ষের প্রধান ট্রিগার হিসেবে দেখা হয়”। এই প্রেক্ষাপটে টাকলামাকানের সামরিক কার্যকলাপ আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

চীনের ক্যারিয়ার কিলার মিসাইলের উন্নতি

National Interest এর আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “DF-21D, বিশ্বের প্রথম ‘ক্যারিয়ার কিলার’ হিসেবে পরিচিত, এবং দীর্ঘ-পাল্লার DF-26B, যা ৪,০০০ কিমি পর্যন্ত টার্গেটে আঘাত করতে পারে, মার্কিন ও মিত্র নৌবাহিনীকে লক্ষ্য করতে ব্যবহৃত হতে পারে”।

CSIS Missile Threat এর তথ্য অনুযায়ী, “২৬ আগস্ট, চীন একাধিক ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করেছে, যা হাইনান ও প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের কাছে দক্ষিণ চীন সাগরের একটি স্থানে অবতরণ করেছে”।

আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক প্রভাব

আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যে পরিবর্তন

Eurasian Research অনুযায়ী, “সাম্প্রতিক সংঘর্ষের একটি সম্ভাব্য কারণ হল ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম। Darbuk-Shyok-Daulat Beg Oldi (DBO) রোড নির্মাণ, যা LAC এর কাছে চলে, সম্পূর্ণ হলে লাদাখের রাজধানী লেহ এবং চীনা সীমান্তের কাছে DBO পোস্টের মধ্যে দূরত্ব দুই দিন থেকে ছয় ঘন্টায় কমিয়ে আনবে”।

মার্কিন-চীন প্রতিযোগিতার নতুন মাত্রা

Australian Naval Institute এর মতে, “স্যাটেলাইট ইমেজ দেখায় চীন তার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় মরুভূমিতে মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরী ও ডেস্ট্রয়ারের মক-আপ তৈরি করেছে, সম্ভবত টার্গেট প্র্যাকটিসের জন্য”।

বিশেষজ্ঞ মতামত ও বাংলাদেশি দৃষ্টিভঙ্গি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, “টাকলামাকানে চীনের এই কার্যকলাপ নিছক সামরিক অনুশীলন নয়। এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে চীন তার প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে তার ক্ষমতা প্রদর্শন করতে চায়।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামের বিশ্লেষণ, “এই ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। বাংলাদেশকে এই পরিস্থিতিতে সতর্ক থেকে নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের মন্তব্য, “চীনের এই কৌশল বিশ্ব রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মরুভূমিতে সামরিক প্রস্তুতি ভবিষ্যতের যুদ্ধ কৌশলের ইঙ্গিত দেয়।”

উপসংহার: মরুভূমিতে ভবিষ্যতের যুদ্ধের প্রস্তুতি

মরুভূমিতে যুদ্ধজাহাজের প্রতিরূপ তৈরি কেবল সামরিক অনুশীলনের জন্য নয়—এর গভীরে রয়েছে আরও বড় কৌশলগত খেলা। Supercar Blondie এর প্রতিবেদনে যথার্থই বলা হয়েছে, “চীন একটি মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী রণতরীর প্রায় নিখুঁত অনুলিপি, USS Gerald R. Ford এর একটি প্রতিকৃতি, টাকলামাকান মরুভূমিতে রক্ষণাবেক্ষণ করে”।

চীনের এই কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে আধুনিক যুদ্ধ আর শুধু সমুদ্র বা আকাশে সীমাবদ্ধ নয়—তার প্রস্তুতি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে নেওয়া যেতে পারে। Reddit এর একটি আলোচনায় যথার্থই বলা হয়েছে, “সামান্য উদ্বেগজনক.. টাকলামাকান মরুভূমি, চীনে একটি রেল সিস্টেমে বিমানবাহী রণতরী টার্গেট টুকরো টুকরো করে উড়িয়ে দেওয়া”।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য এই ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা। আমাদের বুঝতে হবে যে নিরাপত্তার সংজ্ঞা এখন ভূগোলের সীমানা অতিক্রম করে গেছে। মরুভূমিতে তৈরি হওয়া এই যুদ্ধজাহাজের মডেলগুলো শুধু পরীক্ষামূলক স্থাপনা নয়—এগুলো আগামীর যুদ্ধক্ষেত্রের পূর্বাভাস।

আহ্বান ও অনুপ্রেরণা

তরুণ প্রজন্মের কাছে এই ঘটনা একটি শিক্ষা। প্রযুক্তি, কৌশল ও দূরদর্শিতার সমন্বয়েই আধুনিক যুগে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। চীনের টাকলামাকান প্রকল্প দেখিয়ে দেয় যে সীমিত সম্পদেও কীভাবে সর্বোচ্চ কৌশলগত সুবিধা অর্জন করা যায়। আমাদের দেশেরও প্রয়োজন এমন দূরদর্শী পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন।

মরুভূমির বালুকণার মাঝে গড়ে ওঠা এই যুদ্ধজাহাজগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে শান্তির জন্য প্রস্তুতিই সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আর সেই প্রস্তুতি নিতে হবে আজই—কালকের জন্য অপেক্ষা করার সুযোগ নেই।

জনগণের সরকার গঠনে মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার হাফিজুল্লাহ হীরার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১:৪০ অপরাহ্ণ
জনগণের সরকার গঠনে মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার হাফিজুল্লাহ হীরার

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাশিত ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি এবং কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আসনের সম্ভাব্য বিএনপি প্রার্থী হাফিজুল্লাহ হীরা।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,

“বিএনপি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতীক। আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই।”

হাফিজুল্লাহ হীরা আরও বলেন,

“বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো জনগণের ঐক্য। বিএনপি সেই ঐক্যের প্রতীক হয়ে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে একটি জনগণের সরকার গঠনে কাজ করছে।”

তৃণমূল পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় এই তরুণ নেতা জানান, জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণই একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি। তাই বিএনপি জনগণের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে মাঠে রয়েছে।

স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা হাফিজুল্লাহ হীরা বিগত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দলের জন্য নিবেদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তরুণ ও প্রগতিশীল নেতৃত্ব হিসেবে তিনি এলাকাবাসীর মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে হাফিজুল্লাহ হীরা একজন শক্তিশালী ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন। তাঁর জনসংযোগ, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং তরুণ ভোটারদের প্রতি গ্রহণযোগ্যতা তাঁকে এ আসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে— নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে যদি বিএনপি একটি ঐক্যবদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে, তবে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে দলটির পুনরুত্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে। হাফিজুল্লাহ হীরা নিজেকে সেই পরিবর্তনের প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চান।

তিনি শেষমেশ বলেন,

“আমি বিশ্বাস করি, জনগণ যদি ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে পারব যেখানে থাকবে মানবিকতা, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার পূর্ণ প্রতিফলন।”

‘জুলাই আন্দোলন সফল হয়েছে, তবে এর ভিত্তি তৈরি হয়েছিল বহু বছর আগে’ — তারেক রহমান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫, ৬:০০ পূর্বাহ্ণ
‘জুলাই আন্দোলন সফল হয়েছে, তবে এর ভিত্তি তৈরি হয়েছিল বহু বছর আগে’ — তারেক রহমান

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘জুলাই আন্দোলন’ একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, “আমি নিজেকে কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। বরং এই আন্দোলনের সফলতার পেছনে অসংখ্য মানুষের ত্যাগ, শ্রম এবং অবদান রয়েছে। জুলাই মাসে আন্দোলন সফল হলেও এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল বহু বছর আগে থেকেই।”

তারেক রহমান আরও বলেন, “এই আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা যে অবদান রেখেছেন, তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এটি কেবল একটি দলের আন্দোলন নয়, বরং এটি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের লড়াই।”

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসে শুরু হওয়া আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। দলটির নেতারা মনে করেন, আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল অনেক আগেই, তবে জুলাইয়ে তা তীব্রতা ও গতির নতুন রূপ পায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই আন্দোলনের সাফল্যের পেছনে কৌশলগত পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি এবং রাজনৈতিক ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা মনে করেন, এমন একটি সময়ে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, যখন জনগণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় ছিল।

তারেক রহমান তার বক্তব্যে আরও যোগ করেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই সংগ্রামে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। এটি কোনো একক ব্যক্তির অর্জন নয়, বরং সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল।”

এদিকে রাজনৈতিক মহলে আলোচনায় এসেছে, বিএনপি এই সাফল্যের পর পরবর্তী ধাপে কী পরিকল্পনা নিচ্ছে। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ প্রস্তুত করছে যেখানে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মসূচি, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

জনগণের প্রত্যাশা, এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির সূচনা হবে। যদিও রাজনৈতিক অঙ্গনে মতপার্থক্য রয়ে গেছে, তবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও ঐক্যের বীজ রোপণ হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।

কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:১২ পূর্বাহ্ণ
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজের প্রার্থীতার ঘোষণা দিয়েছেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান শিকদার। আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে জেলা শহরের পাবলিক লাইব্রেরি হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, অধ্যক্ষ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবীবুর রহমান ভুইয়ার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান শিকদার কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক ও সভাপতি এবং জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

লিখিত বক্তব্যে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান শিকদার বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে সারা দেশে বিএনপির নেতৃত্বে অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি হলেও হাওড় এলাকার রাজনীতিতে দুর্বল নেতৃত্বের কারণে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা অনুপস্থিত। দুর্বল রাজনৈতিক নেতৃত্ব, ভুল পদক্ষেপ ও জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ফজলুর রহমান বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সক্রিয়ভাবে দলীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলেও আমার মতো পরীক্ষিত তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের কোনঠাসা করে নিষ্ক্রিয় থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।

হাওড় এলাকায় চলমান বিএনপির রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও দৈন্যদশা দূরীকরণে দীর্ঘ রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ফজলুর রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক বলে জানান।